জয়পুরহাট নবগঠিত জেলা। জন্ম ১৯৮৪ । আগে ছিল বৃহত্তর বগুড়া জেলার অংশ। ভারত সীমামতবর্তী এই জেলার উত্তরে দিনাজপুর, পূর্বে গাইবান্ধা ও বগুড়া, দক্ষিনে নওগাঁ ও বগুড়া জেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।
জেলায় অনেক আগে থেকে গ্রামীন বা লোকজ সমৃদ্ধ সংস্কৃতির পরিচয় মিলে। বৃটিশ শাসনামলে কীর্তন,জারী,পালাগান,কবিগান,বাউল,মুর্শিদী,লোকগীতি,ভাওয়াইয়া,যাত্রা ইত্যাদি অনুষ্ঠান হতো নানা উৎসব উপলক্ষ্যে। তখন বর্ষায় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার গান অনুষ্ঠানও উপভোগ করতেন নদী তীরের মানুষ। সারা রাত জেগে জ্যোৎসণারাতে লোকজন পুঁথিপাঠ,পাঁচটাকার কিসমা (রাত চুত্তিুতে গল্প কথা) শুনতেন। রংপুর দিনাজপুরের দক্ষিণাংশে এই জেলা ভাওয়াইয়া গানের প্রভাবাধীন। আগে জমিদার বা ধনাঢ্য পোতদার ব্যত্তিুরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। গ্রামীন খেলা ধুলাও চলত সমান তালে।
দেশ বিভাগের পর লোকজ সংস্কৃতির ধারাটি ধীর ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। যাত্রা চললেও নাটক (থিয়েটার) তরতন সমাজ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। জয়পুরহাট,পাঁচবিবি,আঞ্চেলপুর ও ক্ষেতলালে নাটকের অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ১৯৭১ এ দেশ স্বাধীন হবার পর জেলা সদরসহ উপজেলা পর্যায়েও অনেক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। তবে পৃষ্ঠপোষকতা,দায়িত্বপ্রাপ্ত মূল সংগঠক বা কর্মীর জীবন জীবিকা ও অন্যান্য কাজে ব্যসততার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো আগের মত সত্রিুয় নয় (কিছু ব্যতিত্রুম ছাড়া)। অর্থাভাব, সরকারি সহযোগিতার অভাব ও তৈরি পরিবেশের কারনেও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তৎপরতা কমে যায়। কোন কোনটি নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে ।
বর্তমানে নানান প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতার মাঝেও জেলা সদরে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড কিছু প্রতিদিন চালিয়ে যাচ্ছে সাধ্যমতো। জেলা শিল্পকলা একাডেমী,জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ সঙ্গীত (বিভিন্ন বিষয়ে) নৃত্যের একাধিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা করে চলেছে। ২০০৮ এর মার্চে (১৪-১৬ পর্যমত) তিন দিনব্যাপী ২৭ তম জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সভলভাবে। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ জয়পুরহাট জেলা শাখা সহানীয় সংস্কৃতি কর্মী ও সংস্কৃতিমূলক জনগন এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় সাড়া জাগানো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে । এই সম্মেলনে জাতীয় পর্যায়ের বরেণ্য শিল্পী,সাহিত্যিক,শিক্ষাবিদসহ প্রায় সকল জেলার শিল্পীরা অংশ নেন। জাতীয় দিবসসমূহে জেলা শিশু একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমী,জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ,সঙ্গীতচত্রু,গ্রাম থিয়েটার,ফুলকি,সারগাম,বাউল,আবৃত্তিপরিষদ,শামিতনগর গ্রাম থিয়েটার,মানবাধিকার নাট্য পরিষদ, খেলাঘর আসর , সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এখন সাংস্কৃতিক তৎপরতা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে।
ভাষাঃ
জয়পুরহাট জেলাব্যাপী সুনির্দিষ্ট কোন নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা নেই। আনুমানিক দশ মাইল পর পর ভাষার পার্থক্য কমবেশি বুঝা যায়। জয়পুরহাট ও পাঁচবিবির পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে প্রায় এক ধরনের আঞ্চলিক ভাষা প্রচলিত, যেমন - তুই ভাত খালু? (তুমি/তুই/ভাত খেয়েছ/খেয়েছিস)। আঞ্চেলপুর,ক্ষেতলাল ও কালাই উপজেলার মানুষ একটু টেনে কথা বলেন। এখানে বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষার প্রভাব দেখা যায়। যেমন তুই কোটে যাচ্ছু বারে (তুই কোথায় যাচ্ছিস)? এখানে বারে শব্দটি যেন অলঙ্কার কোন অর্থ বহন করে না। তবে শিক্ষিতদের একাংশ চলিত ভাষায় কথা বলেন (এদের সংখ্যা কম)।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS